আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে মহাভারত কী বলে?

মহাভারত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক। এর গভীর জ্ঞানের সাগরে ডুব দিলে আত্মার অমরত্ব সম্পর্কে এমন অনেক দিক উঠে আসে, যা আমাদের জীবন ও মৃত্যুর সংজ্ঞাকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে শেখায়।

আত্মা অমর: গীতার পরামর্শ

আপনি কি কখনো ভাবেছেন, মৃত্যু কি সত্যিই শেষ? মহাভারত, বিশেষ করে ভগবদ গীতায়, এই প্রশ্নের সরল এবং গভীর উত্তর দিয়েছে। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন:

“ন যায়তে ম্রিয়তে वा কদাচিৎ।”
(গীতা ২.২০)
অর্থাৎ, আত্মা কখনো জন্মায় না, কখনো মরে না। এটি চিরন্তন এবং অমর।

কৃষ্ণের এই কথায় স্পষ্ট, যে মৃত্যু শুধুমাত্র দেহের পরিবর্তন। যেমন আমরা পুরনো কাপড় বদলাই, তেমনি আত্মা এক দেহ ছেড়ে অন্য দেহ গ্রহণ করে। আপনি যখন এই বিষয়টি উপলব্ধি করবেন, তখন মৃত্যুর ভয় আপনাকে আর পীড়া দেবে না।

মহাভারতের চরিত্রদের দৃষ্টিভঙ্গি

মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্র আত্মার অমরত্বের ধারণাকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে উপলব্ধি করেছে। চলুন, তাদের গল্প থেকে আমরা কিছু শিখি।

 ভীষ্মের ত্যাগ

ভীষ্ম পিতামহ, যিনি ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন, তার জীবন আমাদের শেখায় কীভাবে আত্মার অমরত্বের বিশ্বাস একজন মানুষকে দৃঢ়তা দিতে পারে। যখন তিনি শরশয্যায় শায়িত ছিলেন, তখনও তিনি নিজের কর্তব্য পালন থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি বলেছিলেন:

“ধর্মমেব হতো হন্তি।”
অর্থাৎ, ধর্মই চিরন্তন। আত্মার প্রকৃত পথ ধর্মের পথ।

 যুধিষ্ঠিরের উত্তম জবাব

যক্ষের প্রশ্নের উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন:

“আহন্যহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম।”
(মহাভারত, অরণ্য পর্ব)
অর্থাৎ, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, তবুও আমরা ভাবি আমরা অমর।

এটি আমাদের শেখায়, আত্মা অমর হলেও মানব জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম।

 কৃষ্ণের জীবনবোধ

কৃষ্ণ নিজে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আত্মার অমরত্বের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে অর্জুন যখন তার আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন কৃষ্ণ তাকে বলেছিলেন:

“অবিনাশি তু তদ্বিদ্ধি।”
(গীতা ২.১৭)
অর্থাৎ, আত্মা অবিনাশী। কেউ এটিকে নষ্ট করতে পারে না।

আত্মার অমরত্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

মহাভারতের এই শিক্ষা আধুনিক বিজ্ঞানেও প্রতিফলিত হয়। বিজ্ঞান বলে, শক্তি কখনো নষ্ট হয় না, এটি কেবল রূপ পরিবর্তন করে। মহাভারতের আত্মার অমরত্বের ধারণা একই রকম। আপনি যখন এটি বুঝবেন, তখন আপনার জীবনে আরও শান্তি আসবে।

জীবনে প্রয়োগ

আপনার জীবনে আত্মার অমরত্বের ধারণা কীভাবে প্রয়োগ করবেন? এখানে কয়েকটি সহজ পদ্ধতি:

  • ধর্মের পথে চলুন: মহাভারত বলে, আত্মার মুক্তি পেতে ধর্ম মেনে চলা অপরিহার্য।
  • ক্ষমা ও দয়া চর্চা করুন: ভীষ্ম এবং যুধিষ্ঠিরের মত চরিত্রের উদাহরণ অনুসরণ করুন।
  • মৃত্যুভয় ত্যাগ করুন: মনে রাখুন, মৃত্যু কেবল দেহের জন্য; আত্মার কোনো ক্ষতি হয় না।
  • ধ্যান ও যোগ অভ্যাস করুন: আত্মার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে ধ্যানের গুরুত্ব অপরিসীম।

একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

মহাভারত আমাদের শেখায়, জীবনকে শুধুমাত্র ভোগের জন্য নয়, বরং জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যবহার করতে। আমরা যদি প্রতিদিন আত্মার অমরত্বের কথা মনে রাখি, তবে জীবনের সমস্ত সমস্যাকে আমরা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *