আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুধুমাত্র মানুষের জীবনেই নয়, প্রকৃতির উপরও কতটা প্রভাব ফেলেছিল? মহাভারতের কাহিনী থেকে আমরা অনেক জীবন-উপদেশ পাই, কিন্তু পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধও এই মহাগ্রন্থ থেকে শেখার মতো বিষয়। চলুন, এই ঐতিহাসিক যুদ্ধের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে একটু ভাবি।
যুদ্ধের সময় প্রকৃতির অবস্থা
যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র কল্পনা করুন। ঘোড়ার খুরের শব্দ, অস্ত্রের সংঘর্ষ, এবং মানুষের চিৎকারে ভরা সেই পরিবেশে গাছপালা, পশুপাখি, এবং জমি কেমন অবস্থায় ছিল? মহাভারতে বলা হয়েছে:
“যেখানে ধর্ম ও অধর্মের সংঘাত হয়, সেখানে প্রকৃতি নীরব সাক্ষী থাকে।”
আপনার মনে হয় না, এই সংঘাত প্রকৃতির উপরও গভীর ছাপ ফেলেছে? ১৮ দিনের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় প্রতিটি গাছ কাটা পড়েছিল, কারণ সৈন্যরা কাঠ সংগ্রহ করেছিল আগুন জ্বালানোর জন্য।
নদী এবং জলাশয়ের দূষণ
আপনি জানেন, যুদ্ধক্ষেত্রে মৃতদেহ, রক্ত, এবং অস্ত্রের টুকরো নদী ও জলাশয়ে পড়ে দূষণ ঘটিয়েছিল। মহাভারতের একটি শ্লোক উল্লেখ করে:
“জলই জীবন, কিন্তু যখন তা রক্তে মিশে যায়, তখন জীবন শেষ হতে শুরু করে।”
কুরুক্ষেত্রের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরস্বতী নদী কি এই দূষণ থেকে মুক্ত ছিল? অজস্র অস্ত্র ধোয়া হত নদীতে, যা জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক হয়ে উঠেছিল। আপনি কি মনে করেন, এই দূষণ এখনও আমাদের জল ব্যবস্থার জন্য শিক্ষণীয় কিছু দেয়?
বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি
যুদ্ধে ব্যবহৃত ছিল অগণিত হাতি, ঘোড়া এবং অন্যান্য প্রাণী। যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী সময়ে এই প্রাণীগুলোর জীবন কতটা বিপন্ন হয়েছিল, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। মহাভারতে আছে:
“প্রাণীহত্যা যখন ধর্মের নামে ঘটে, তখন প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে ছাড়ে না।”
আপনি কি ভেবে দেখেছেন, এই প্রতিশোধ কি পরবর্তী প্রজন্মের উপর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আকারে নেমে এসেছিল?
কৃষি ও মাটির ক্ষতি
১৮ দিনের এই যুদ্ধের ফলে জমির উর্বরতা হারিয়েছিল। রথ, ঘোড়া এবং হাতির চলাচলে মাটি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়েছিল। মহাভারতের একটি শিক্ষণীয় বার্তা হলো:
“মাটি হল মায়ের মতো; একবার তা হারালে পুনরুদ্ধার কঠিন।”
আপনার মনে হয়, এই শিক্ষা আমাদের আধুনিক কৃষিক্ষেত্রের প্রতি দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করতে পারে না?
সামাজিক এবং পরিবেশগত পুনর্গঠন
যুদ্ধের পরে পাণ্ডব ও কৌরবরা কি পরিবেশ পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছিলেন? মহাভারতে সরাসরি এর উল্লেখ নেই, কিন্তু যুদ্ধের শেষের দিকে যুধিষ্ঠির বলেন:
“শান্তি তখনই আসবে, যখন মানুষ ও প্রকৃতি একসঙ্গে চলবে।”
এই শ্লোক থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি, প্রকৃতির ক্ষতি পূরণ করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত। আপনি কি মনে করেন, আমরা এই ঐতিহাসিক ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারি?
সমাপ্তি ভাবনা
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ থেকে পরিবেশের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছিল, তা আমাদের শিক্ষা দেয় যে ধর্ম এবং জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। আপনি কি মনে করেন, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহাভারতের এই শিক্ষাগুলো মেনে চললে কি আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে পারব?