কৃষ্ণ কি প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব বোঝাতে পেরেছিলেন?

জীবনের যাত্রাপথে অনেক বার এমন মুহূর্ত আসে যখন আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে ভাবতে হয়। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমি বারবার মহাভারত পড়েছি। আর সেখানে কৃষ্ণের জীবনযাত্রা ও তার গভীর দার্শনিক চিন্তাধারা আমাকে প্রতিবার মুগ্ধ করেছে। কৃষ্ণের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব স্পষ্ট। তাঁর আচরণ, তাঁর কথা এবং তাঁর পরামর্শ, সবই যেন আমাদের শেখায় কীভাবে জীবনের প্রতিটি স্তরে আমাদের গুরুজনদের সম্মান করা উচিত।

প্রবীণদের সম্মানের উদাহরণ মহাভারতে

 ভীষ্মের প্রতি শ্রদ্ধা

যখন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়, ভীষ্ম ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি উভয় পক্ষেরই গুরুজন। ভীষ্ম পিতামহের প্রতি কৃষ্ণের শ্রদ্ধা ছিল অতুলনীয়। যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়েও কৃষ্ণ কখনো ভীষ্মের প্রতি অসন্মান দেখাননি। মহাভারতের এক স্থানে কৃষ্ণ বলেন:
“ধর্মের পথ কঠিন, কিন্তু গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা সেই পথকে আলোকিত করে।”

এই বাক্যটি আমার কাছে এক গভীর বার্তা বহন করে। আপনি যখন প্রবীণদের সম্মান করেন, তখন আপনি শুধু তাঁদের সম্মান করেন না, বরং ধর্মের পথেও নিজেকে স্থাপন করেন।

 কুন্তীর প্রতি কৃষ্ণের ভালোবাসা

কুন্তী, যিনি কৃষ্ণের পিসি, ছিলেন এক সাহসী এবং মমতাময়ী নারী। কৃষ্ণ সবসময় কুন্তীর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। মহাভারতে এমন একটি ঘটনা রয়েছে, যখন কুন্তী কৃষ্ণকে তাঁর সন্তানদের সুরক্ষার জন্য অনুরোধ করেন। কৃষ্ণ কুন্তীর কাছে প্রতিশ্রুতি দেন:
“আপনার সন্তানেরা শুধু আপনারই নয়, তারা আমারও দায়িত্ব।”

কৃষ্ণের এই প্রতিশ্রুতি কেবল আত্মীয়তার বন্ধন নয়, বরং প্রবীণদের প্রতি দায়িত্ববোধেরও একটি প্রতীক।

 দ্রৌপদীর পিতার প্রতি শ্রদ্ধা

যখন দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় কৃষ্ণ উপস্থিত হন, তিনি দ্রুপদ রাজার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। যদিও দ্রুপদ ছিলেন পাণ্ডবদের মিত্র, কৃষ্ণ কখনোই তাঁকে একজন সাধারণ রাজা হিসেবে দেখেননি। তিনি দ্রুপদকে একটি পরামর্শ দেন:
“যে ব্যক্তি প্রবীণদের মতামত শুনে কাজ করে, তার জীবন সঠিক পথে এগিয়ে যায়।”

এই কথাগুলি আজও আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, প্রবীণদের মতামত আমাদের কতটা সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে?

 যুধিষ্ঠিরের প্রতি দিকনির্দেশনা

যুধিষ্ঠিরকে কৃষ্ণ সবসময় গুরুজনদের কথা শোনার পরামর্শ দিয়েছেন। মহাভারতে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বলেন:
“যদি তুমি প্রবীণদের উপদেশের প্রতি অবিচল থাকো, তবে তোমার রাজ্য হবে সুখী এবং শান্তিময়।”

এই উক্তি শুধু যুধিষ্ঠিরের জন্য নয়, বরং আমাদের সবার জন্য একটি দিকনির্দেশনা। আমি অনুভব করি, আপনি যদি প্রবীণদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান গ্রহণ করতে পারেন, তবে জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান সহজেই খুঁজে পাবেন।

কেন প্রবীণদের সম্মান গুরুত্বপূর্ণ?

প্রবীণরা আমাদের জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। তাঁদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আলোকপাত করতে পারে। কৃষ্ণ বারবার আমাদের শিখিয়েছেন যে প্রবীণদের সম্মান করা মানেই আমাদের নিজের জীবনের ভিত্তি মজবুত করা।

কৃষ্ণের আরেকটি উক্তি এখানে উল্লেখযোগ্য:
“যে সমাজ প্রবীণদের সম্মান করে, সে সমাজ কখনো ধ্বংস হয় না।”

আমার মনে হয়, এই কথার গভীরতা আমরা সবাই অনুভব করতে পারি। আপনি যখন প্রবীণদের সম্মান করেন, তখন আপনি তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করেন। এটি একটি সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তোলে, যা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে।

আপনার জীবনে এই শিক্ষাগুলি কীভাবে প্রয়োগ করবেন?

  • গুরুজনদের কথা মন দিয়ে শোনার অভ্যাস করুন।
  • তাঁদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করুন।
  • তাঁদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিন।
  • তাঁদের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন।

যদি আপনি এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলি রপ্ত করতে পারেন, তবে আপনার জীবন এবং সম্পর্ক উভয়ই আরও সুন্দর হবে।

একটি প্রশ্ন

কৃষ্ণ আমাদের প্রবীণদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব বোঝাতে সফল হয়েছেন। কিন্তু আমরা কি সত্যিই তাঁর এই শিক্ষাগুলি আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পেরেছি? আপনি কীভাবে কৃষ্ণের এই শিক্ষাকে আপনার জীবনের অংশ করবেন?

“ধর্মের পথে থাকা কঠিন, কিন্তু প্রবীণদের সম্মানই সেই পথে আলোর দিশা দেয়।”—এই কথাটি স্মরণ রেখে চলুন, আর আপনার জীবনকে কৃষ্ণের শিক্ষায় আলোকিত করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top