আপনি কি কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন যেখানে চারপাশের বিশৃঙ্খলা আপনার মনকে অস্থির করে তুলেছে? মহাভারতের কৃষ্ণ আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে এমন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে মানসিক স্থিরতা রক্ষা করা যায়। আমি আজ আপনাকে কৃষ্ণের জীবনের কিছু দৃষ্টান্তের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে চাই।
কৃষ্ণের জীবনের মানসিক স্থিরতার উদাহরণ
যুদ্ধক্ষেত্রে গীতার শিক্ষা
যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে প্রত্যেক মুহূর্তে জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্ব। ঠিক সেই মুহূর্তে অর্জুন যখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, কৃষ্ণ তাকে বলেছিলেন,
“ক্লৈব্যং মা স্ম গমঃ পার্থ নৈতত্ত্বয়্যুপপদ্যতে। ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।”
অর্থাৎ, “হে পার্থ, এই ক্লৈব্যতা তোমার জন্য উপযুক্ত নয়। হৃদয়ের দুর্বলতা পরিত্যাগ করো এবং উঠে দাঁড়াও।”
এই কথাগুলি শুধু অর্জুনকেই নয়, আপনাকেও শিক্ষা দেয়। জীবনে যতই কঠিন পরিস্থিতি আসুক, মন শক্ত রেখে সিদ্ধান্ত নিন। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, এই মনোবল কিভাবে অর্জন করা যায়? কৃষ্ণের মতো নিজের কর্তব্যে অবিচল থাকুন।
শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকায় ফিরে আসা
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে, যখন অনেক প্রাণ হারিয়েছিল, কৃষ্ণ কোনো বিষণ্নতায় ডুবে যাননি। তিনি জানতেন, জীবনের সবকিছুই অস্থায়ী। মহাভারত বলে,
“যথার্থ কর্মফল ভগবানের ইচ্ছায় নির্ধারিত।”
এই দর্শন তাকে মানসিক স্থিরতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।
আমাদের জীবনে কৃষ্ণের শিক্ষার প্রয়োগ
নিজের কর্তব্যে অটল থাকুন
আমাদের জীবনেও অনেকবার আমরা দিশাহীন বোধ করি। কৃষ্ণ শিখিয়েছেন, কর্তব্যই জীবনের পথনির্দেশক। আপনি কি আপনার দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন? মনে রাখুন, স্থির মন আপনাকে সবকিছু সম্ভব করতে সাহায্য করবে।
কর্মফল ছেড়ে দিন
কৃষ্ণ বলেছেন,
“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।”
আপনার কর্ম করার অধিকার আছে, কিন্তু ফলের ওপর আপনার অধিকার নেই। আপনি কি সবসময় ফলের চিন্তায় ভেঙে পড়েন? এই শিক্ষা আপনাকে সেই চক্র থেকে মুক্তি দিতে পারে।
প্রতিকূলতায় ধৈর্য ধরুন
জীবনে যখন ঝড় আসে, তখন কৃষ্ণের শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি ঝড়ের পরই রৌদ্র আসে। যেমন কৃষ্ণ লঙ্কা যুদ্ধে বিভীষণকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তেমনি আপনিও আপনার জীবনের সমর্থকদের কাছে সাহায্য চাইতে পারেন।
মানসিক স্থিরতা অর্জনের পদ্ধতি
- ধ্যান: প্রতিদিন কয়েক মিনিট ধ্যান করুন। কৃষ্ণ নিজেও যোগের মাধ্যমে নিজের মন শান্ত রাখতেন।
- সৎসংগ: ভালো মানুষের সঙ্গে সময় কাটান। মহাভারত বলে, “যারা সত্য ও ধর্মকে সমর্থন করে, তাদের সঙ্গে থাকুন।”
- আত্মনিরীক্ষা: নিজের অনুভূতিগুলোর গভীরে যান। কৃষ্ণের মতো জীবনের গভীর সত্যগুলো উপলব্ধি করুন।
শেষ কথা
কৃষ্ণ বলেছেন,
“সমত্বং যোগ উচ্যতে।”
অর্থাৎ, সমবস্থাই যোগ। আপনি কি এই সমবস্থা অর্জন করতে প্রস্তুত? মহাভারতের কৃষ্ণ আমাদের দেখিয়েছেন যে মানসিক স্থিরতা অর্জন করা সম্ভব। আপনার জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে কৃষ্ণের মতো দৃঢ় মনোবল দিয়ে গ্রহণ করুন। তাহলে কি আপনি কৃষ্ণের মতো মানসিক স্থিরতা বজায় রাখতে পারবেন?
মনে রাখবেন, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্থির মনের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষ্ণের এই শিক্ষাগুলি আপনাকে নতুন করে ভাবতে এবং জীবনকে আরও সুন্দরভাবে দেখতে সাহায্য করবে।