আপনি কি কখনো ভেবেছেন, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া কেবল আপনার জীবনে নয়, মহাকাব্যিক কাহিনিগুলিতেও কতটা বিশাল প্রভাব ফেলেছে? আমি যখন মহাভারত পড়ি, তখন বুঝতে পারি কৌরব ও পাণ্ডবদের সম্পত্তি বিতর্ক আসলে কেবল একটি জমির লড়াই নয়, এটি ছিল পারিবারিক সম্পর্কের ভাঙনের শুরু। তাদের গল্প থেকে আপনি আমি অনেক কিছু শিখতে পারি, বিশেষ করে কীভাবে সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যাগুলি আমাদের জীবনেও সম্পর্কের সংকট তৈরি করতে পারে।
সম্পত্তি বিতর্কের মূল কারণ
দ্রৌপদীর সভায় অপমান, দ্যুতক্রীড়ার অভিশাপ, এবং একশো কৌরব বনাম পাঁচ পাণ্ডব—এ সব কিছুর মূলে ছিল একটাই বিষয়: হস্তিনাপুরের সিংহাসন এবং তার সংলগ্ন জমি। দুর্যোধন যখন বলে, “আমি পাণ্ডবদের সূচাগ্র মাটি দিতেও রাজি নই,” তখন তার অহংকার ও লোভ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, দুর্যোধনের এই মনোভাব তার পরিবারের শান্তি ধ্বংস করেছিল?
আপনার পরিবারে যদি কখনো এমন পরিস্থিতি আসে, মনে রাখবেন দুর্যোধনের মতো অহংকার না করে সংকল্প নিতে হবে সমস্যার সমাধান করার।
যুধিষ্ঠিরের ধৈর্য এবং কৌশল
যুধিষ্ঠির ছিলেন ধর্মরাজ, যিনি সর্বদা ন্যায়পরায়ণতার পথে চলতে চেয়েছেন। দ্যুতক্রীড়ায় পরাজয়ের পরও তিনি রাজত্ব পুনরুদ্ধার করার জন্য সরাসরি যুদ্ধ না করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। আপনি কি জানেন, শ্রীকৃষ্ণ যখন দূত হয়ে দুর্যোধনের দরবারে যান, তখন তিনি শান্তির প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন? যুধিষ্ঠির কেবল পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিলেন।
আপনি আমি যদি যুধিষ্ঠিরের ধৈর্য ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা গ্রহণ করি, তাহলে হয়তো আমাদের পারিবারিক সমস্যাগুলি সহজেই সমাধান করতে পারব।
দ্রৌপদীর অপমান
দ্রৌপদীর চুল খোলা রাখার প্রতিজ্ঞা এবং তার সম্মানহানির প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ়তা পুরো মহাভারতকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। কৌরবদের অপমান এবং দ্রৌপদীর প্রতি দুর্যোধন ও দুঃশাসনের আচরণ দেখায় যে পরিবারে যখন নারীদের প্রতি সম্মান কমে যায়, তখন সেই পরিবার ভেঙে যায়।
আপনার বাড়ির নারীদের সম্মান দেওয়া কি আপনি নিশ্চিত করছেন? দ্রৌপদীর কাহিনি আমাদের শেখায়, নারীর সম্মান রক্ষা করা মানে পরিবার ও সমাজের স্থিতি রক্ষা করা।
অর্জুনের দ্বিধা এবং শ্রীকৃষ্ণের গীতার শিক্ষা
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আগে অর্জুন যখন নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়, তখন শ্রীকৃষ্ণ তাকে গীতার মাধ্যমে জীবনের প্রকৃত দায়িত্ব বোঝান। শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “ধর্মের পথে দাঁড়িয়ে যা কিছু ন্যায়সঙ্গত, তা সম্পন্ন করাই তোমার কর্তব্য।”
আপনার জীবনেও কি কখনো আপনি নিজের পরিবারের সঙ্গে বিরোধে পড়েছেন? গীতার এই শিক্ষা অনুসরণ করলে আপনি আপনার কর্তব্য ও ন্যায়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পাবেন।
ভীষ্ম ও দ্রোণাচার্যের নিরপেক্ষতা
ভীষ্ম ও দ্রোণাচার্য, দুই মহান চরিত্র, পরিবার ও ন্যায়ের মধ্যে দ্বিধায় ছিলেন। ভীষ্ম বলেছিলেন, “আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, কিন্তু আমি কৌরবদের ভুল বুঝতে পারি।” তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করে যে পরিবারের প্রতি একান্ত অনুগত থাকলেও ভুলকে সমর্থন করা উচিত নয়।
আপনার জীবনে কখনো কি আপনি ভুল সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন কেবল পরিবারের প্রতি অনুগত থাকার জন্য? ভীষ্মের থেকে আমরা শিখতে পারি, ন্যায়ের পথে থাকা কখনোই দুর্বলতা নয়।
পারিবারিক সংকটের সমাধান: মহাভারতের শিক্ষা
মহাভারত আমাদের বলে, সম্পত্তি কখনোই পরিবারের থেকে বড় হতে পারে না। আপনি যদি পরিবারে শান্তি চান, তাহলে অহংকার, লোভ, এবং ভুল বোঝাবুঝিকে দূরে রাখতে হবে। মহাভারতের মূল শিক্ষা হলো, পরিবারে যদি বিশ্বাস, সম্মান এবং ন্যায় বজায় থাকে, তবে সম্পত্তির ঝগড়াও সহজেই মিটে যায়।
একটি প্রশ্ন
আপনার জীবনে মহাভারতের মতো কোনো সংকট এসেছে কি? যদি এসে থাকে, তবে কীভাবে শ্রীকৃষ্ণের গীতা বা যুধিষ্ঠিরের ধৈর্য আপনাকে সাহায্য করতে পারে?