গীতা থেকে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের শিক্ষা

আপনি কি জীবনের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন? দিনের শেষে মনে হচ্ছে যেন সব কিছু হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে? এই পরিস্থিতিতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে এক অসাধারণ গ্রন্থ—শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। গীতার শিক্ষা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং আধুনিক জীবনের জন্যও অতি প্রাসঙ্গিক। আজ আমি আপনাকে গীতার আলোকে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের কয়েকটি দিক শিখিয়ে দেব।

গীতার প্রসঙ্গ: একটি অনন্ত জ্ঞান

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার রচনা মহাভারতের যুদ্ধক্ষেত্রে। অর্জুন যখন আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন, শ্রীকৃষ্ণ তখন তাকে যুদ্ধে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেন। কিন্তু সেই শিক্ষা শুধু যুদ্ধে জয়ের জন্য নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। গীতার প্রতিটি শ্লোকই যেন আমাদের জীবনের দিশারি।

স্ট্রেসের কারণ: গীতার দৃষ্টিভঙ্গি

গীতার মতে, জীবনে স্ট্রেসের মূল কারণ হলো আসক্তি ও অহং। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন:

“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” (২.৪৭)

অর্থাৎ, আপনার কাজ করার অধিকার আছে, কিন্তু ফলাফলের প্রতি আসক্তি থাকা উচিত নয়। আমরা যখন ফলের চিন্তায় ডুবে যাই, তখনই স্ট্রেস আমাদের গ্রাস করে।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের জন্য গীতার শিক্ষা

 নিজের কর্তব্যে মনোনিবেশ করুন

স্ট্রেস দূর করতে গীতার প্রথম শিক্ষা হলো নিজের কর্তব্য পালন করা। আমি যখন শুধুমাত্র আমার কাজের প্রতি মনোযোগ দিই, তখন মনের অস্থিরতা দূর হয়।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি অফিসে একটি বড় প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদি আপনি কেবল ফলাফল নিয়ে চিন্তিত হন—কতজন আপনার প্রেজেন্টেশন পছন্দ করবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন—তাহলে কাজটি উপভোগ করতে পারবেন না। বরং আপনার উচিত কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া।

 সমদৃষ্টি ধারণ করুন

গীতায় বলা হয়েছে:

“সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়জয়ৌ।” (২.৩৮)

অর্থাৎ সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয়—সবকিছুই সমানভাবে গ্রহণ করুন। জীবনের ওঠাপড়া স্বাভাবিক। স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে এই সমদৃষ্টি ধারণ করতে হবে।

 যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মন শান্ত রাখুন

গীতা যোগের গুরুত্ব বহুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন:

“যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি” (২.৪৮)

অর্থাৎ যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কাজ করুন। প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিট ধ্যান বা যোগব্যায়াম করলে আপনার মনের অস্থিরতা কমবে। আমি নিজে প্রতিদিন ধ্যান করি, আর এতে আমার মন শান্ত থাকে। আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

 অহং ছাড়ুন

অহংকার স্ট্রেসের আরেকটি বড় কারণ। যখন আমরা নিজেকে পৃথিবীর কেন্দ্র মনে করি, তখন জীবনের প্রতিটি ঘটনাই আমাদের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন:

“অহংকারং বালাম দম্ভং… তেজঃ ক্ৰোধং ত্যাগমেব চ।” (১৬.৪)

অহং ছেড়ে দিন, দেখবেন জীবন অনেক হালকা লাগবে।

মহাভারতের চরিত্র থেকে শেখা

  •  অর্জুনের দ্বিধা ও সমাধান: অর্জুন যখন আত্মবিশ্বাস হারিয়েছিলেন, শ্রীকৃষ্ণ তাকে দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেন। আপনিও যদি জীবনের কোনো সমস্যায় আটকে যান, তাহলে নিজের কর্তব্যে মনোযোগ দিন।
  •  যুধিষ্ঠিরের ধৈর্য: যুধিষ্ঠির সবসময় শান্ত ও ধৈর্যশীল ছিলেন। আপনি যদি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যুধিষ্ঠিরের মতো ধৈর্য ধরেন, তাহলে স্ট্রেস আপনাকে ছুঁতেও পারবে না।
  •  কর্ণের নিষ্ঠা: কর্ণ কখনও তার কর্তব্য থেকে পিছপা হননি। তার নিষ্ঠা আমাদের শেখায় যে নিজের কাজেই শান্তি পাওয়া সম্ভব।

গীতার শিক্ষা জীবনে প্রয়োগ

আপনি গীতার এই শিক্ষাগুলো কীভাবে জীবনে প্রয়োগ করবেন?

  • প্রতিদিন সকালে ধ্যান করুন।
  • দিনশেষে কাজের ফল নিয়ে চিন্তা করবেন না।
  • যে কোনো সমস্যার সময় গীতার শ্লোক পড়ুন। এতে আপনার মন শান্ত হবে।

জীবনের যুদ্ধ

জীবন একপ্রকার যুদ্ধক্ষেত্র। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা আপনাকে সেই যুদ্ধে সফল হতে সাহায্য করবে। তবে আপনি কি প্রস্তুত সেই শিক্ষাগুলো নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে? মনে রাখবেন, গীতার প্রতিটি শ্লোকই একটি জীবন্ত মন্ত্র। আপনার জীবনের চাপ সামলাতে কোন শ্লোকটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে? আজই খুঁজে বের করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top