দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী থাকাকে সমাজ কীভাবে দেখেছিল?

মহাভারতের একটি বিশেষ অধ্যায় হল দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী থাকা। এটি একদিকে যেমন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় চর্চার বিষয়, তেমনি আধুনিক যুগেও অনেক প্রশ্ন তোলে। আপনি এবং আমি যখন মহাভারতের ঘটনাগুলো দেখি, তখন এ নিয়ে ভাবনা আসাটাই স্বাভাবিক। দ্রৌপদীর জীবনের এই অধ্যায় আমাদের জীবনেরও নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করতে পারে।

দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামীর প্রেক্ষাপট

আপনি জানেন, দ্রৌপদী ছিলেন পাঞ্চাল রাজা দ্রুপদের কন্যা। তার স্বয়ম্বর সভায় অর্জুন দ্রৌপদীকে জয় করেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে, কুন্তীর ভুল বোঝার কারণে দ্রৌপদীকে পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত শুধু মহাভারতের গল্পে নয়, প্রাচীন ভারতীয় সমাজেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল।

যদি মহাভারতের শ্লোকগুলো দেখি, এই সিদ্ধান্তের পিছনে ধর্ম, কর্তব্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গভীর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। কুন্তী বলেছিলেন:
“যা পেয়েছো তা সবাই মিলে ভাগ করে নাও।”
এই বাক্য থেকেই পাণ্ডবরা দ্রৌপদীকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। আপনি কি ভাবছেন, এটা কি ন্যায়সঙ্গত ছিল? সমাজ তখনও এই প্রশ্ন তুলেছিল।

প্রাচীন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী থাকা তৎকালীন সমাজে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পাণ্ডবদের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য করা হয়েছিল। যজ্ঞ বা পুরাণের নিয়ম অনুসারে, এটি তখনকার ধর্মগ্রন্থে সঠিক বলে বিবেচিত হয়।

আপনি মহাভারতের একটি কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন:
“ধর্মই শ্রেষ্ঠ। যে ধর্ম নীতির সঙ্গে যায়, তা পালিত হওয়া উচিত।”
এই নীতি অনুসারে দ্রৌপদীর বিয়ে সমাজে ন্যায্যতা পায়।

দ্রৌপদীর চরিত্রের শক্তি

আমি যখন দ্রৌপদীর জীবন বিশ্লেষণ করি, তার চরিত্রের দৃঢ়তা আমাকে মুগ্ধ করে। পাঁচ স্বামী থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনও ন্যায় ও ধর্মের পথ থেকে বিচ্যুত হননি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগেও তিনি পাণ্ডবদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

দ্রৌপদী একবার বলেছিলেন:
“অন্যায় যুদ্ধে আমি জয় চাই না, তবে ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে ভয় পাই না।”
আপনার জন্য এই শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জীবনে ন্যায় ও কর্তব্য পালনে সাহস থাকা দরকার।

বর্তমান যুগে এর প্রাসঙ্গিকতা

আপনার জীবনের কোনো মুহূর্তে যদি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন দ্রৌপদীর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, দৃঢ় মনোবল ও ন্যায়বোধের সাহায্যে আপনি তা সামলে উঠতে পারবেন।

যেমন ধরুন, কর্মজীবনে যখন আপনি নীতিগত চাপে পড়েন, তখন দ্রৌপদীর মতো স্থির থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে,
“প্রত্যেক বাধা পার করার জন্য নিজের মধ্যে সাহস খুঁজে নিতে হয়।”

দ্রৌপদীর শিক্ষা আমাদের জন্য

দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী থাকা সমাজের জন্য যতটা প্রশ্নের বিষয় ছিল, ততটাই তা আমাদের শিক্ষা দেয়। সম্পর্ক, দায়িত্ব এবং বিশ্বাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে তিনি ছিলেন অতুলনীয়।

আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন রেখে যেতে চাই: মহাভারত আমাদের শিখিয়েছে যে ধর্মের পথে থাকাই প্রধান, কিন্তু আপনি কি আপনার জীবনে প্রতিদিন সেই নীতিগুলো অনুসরণ করেন?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top