দ্রৌপদী কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শিকার?

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে দ্রৌপদীর জীবনের গল্প আমাদের সমাজের এক গভীর চিত্র তুলে ধরে? মহাভারতের এই অনন্যা নারী একদিকে ছিলেন সাহসী, বিদুষী, আর অন্যদিকে ছিলেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এক চরম শিকার। আসুন, আমি এবং আপনি একসাথে তাঁর জীবনের কিছু দিক বিশ্লেষণ করি এবং দেখি কিভাবে তা আজকের সমাজেও প্রাসঙ্গিক।

দ্রৌপদীর জন্ম ও নিয়তি

দ্রৌপদী জন্মেছিলেন এক বিশেষ উদ্দেশ্যে—তাঁর জন্মই যেন প্রতিশোধের আগুনের প্রতীক। তিনি ছিলেন এক যজ্ঞকুণ্ড থেকে উদ্ভূত, একজন নারীর চেয়ে বেশি একজন প্রতিশোধপরায়ণ দেবী। কিন্তু তাঁর জীবনে নিয়তি কি তাঁকে কখনো তাঁর নিজের জন্য বাঁচতে দিয়েছে?

“যতী গৃহস্থের দ্বারে দ্বারে; যিনি ধৈর্যশীল, তিনিই পরম গুণবান।” এই বাণী দ্রৌপদীর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি। ধৈর্যই তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিল, যদিও তাঁর প্রতি সমাজের ব্যবহার বারবার প্রশ্ন তুলেছে নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে।

সভায় দ্রৌপদীর অসম্মান: পুরুষতান্ত্রিকতার চরম উদাহরণ

আপনার মনে আছে কিভাবে কৌরব সভায় দ্রৌপদীকে টেনে আনা হয়েছিল? তিনি যখন প্রশ্ন করেছিলেন, “আমি কি দাসী না রাণী?”, তখন কোনো উত্তর আসেনি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাঁকে এক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছিল। এমনকি পাণ্ডবদের মতো বিদ্বান এবং ন্যায়পরায়ণ পুরুষরাও তখন নীরব ছিলেন।

মহাভারত বলে, “অধর্মের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলাই ধর্ম।” দ্রৌপদী এই ধর্ম পালন করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে সমাজ সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই ঘটনার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন, সমাজে নারীর অবস্থান তখন কতটা নাজুক ছিল।

পাঁচ স্বামী: ইচ্ছার বিরুদ্ধে বন্ধন

দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী থাকা কি তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন ছিল? একদম নয়। দ্রৌপদী চেয়েছিলেন অর্জুনকে, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তাঁকে পঞ্চপাণ্ডবের সবার স্ত্রী হতে হয়। এটা কি তাঁর জীবনের স্বাধীনতার অপমান নয়?

“যিনি নিজের ইচ্ছায় স্বাধীন, তিনি সত্যিকার মুক্ত।” মহাভারতের এই উক্তি মনে করিয়ে দেয়, দ্রৌপদী কখনোই তাঁর নিজের জীবনের মালিক হতে পারেননি।

দ্রৌপদীর প্রতিশোধ: শক্তির প্রতীক

যদিও সমাজ বারবার তাঁকে অসম্মান করেছে, তিনি কখনো নিজেকে দুর্বল ভাবেননি। যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রৌপদীর অনুপ্রেরণা ছাড়া পাণ্ডবরা কখনোই বিজয় লাভ করতে পারত না। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ তাঁর প্রতিশোধেরই পরিণাম।

দ্রৌপদীর শিক্ষা: আপনার জীবনে প্রাসঙ্গিক

আপনি যদি দ্রৌপদীর জীবন থেকে শিখতে চান, তবে প্রথম শিক্ষা হবে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা। তিনি যেমন নিজের সম্মান রক্ষার জন্য লড়াই করেছেন, তেমনি আপনাকেও আপনার জীবনের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

প্রশ্ন যা থেকে যায়

দ্রৌপদীর জীবনের দিকে তাকিয়ে আমি এবং আপনি কি ভাবতে পারি যে আমাদের সমাজ আজ কতটা বদলেছে? আমরা কি এখনো নারীদের জীবনে দ্রৌপদীর মতো অন্যায় করি না? মহাভারতের বাণী অনুযায়ী, “ধর্মের পথে হাঁটো, কারণ ধর্মই জীবনের মূল ভিত্তি।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top