ধৃতরাষ্ট্রের জীবন থেকে আমরা শিখি যে পক্ষপাতিত্ব একটি পরিবারের শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার ভিত্তি কতটা দুর্বল করতে পারে। আপনি হয়তো ভাবছেন, ধৃতরাষ্ট্র কি ইচ্ছাকৃতভাবে তার সন্তানদের অনৈতিক কার্যক্রমে উৎসাহিত করেছিলেন? হয়তো না, কিন্তু তার পক্ষপাতিত্বের কারণে কিছু সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম সঠিক পথে পরিচালিত হয়নি।
ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্বের মূল কারণ
ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ ছিলেন। এই শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। তিনি সবসময় তার অধিকার নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন এবং মনে করতেন যে তার ছেলে দুর্যোধনকে রাজা না করা হলে, তার নিজের অস্তিত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এই ভয়ই তাকে পক্ষপাতিত্ব করতে প্ররোচিত করেছিল।
কৃষ্ণের একটি উক্তি থেকে আমরা শিখি:
“অধর্ম যখন ধর্মকে আচ্ছন্ন করে, তখন তার পরিণতি সর্বনাশ।”
এই উক্তি ধৃতরাষ্ট্রের অবস্থানকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে। তিনি হয়তো বুঝতেই পারেননি যে তার পক্ষপাত তার পরিবারের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দেবে।
দুর্যোধনের প্রতি অন্ধ সমর্থন
আপনি যদি দুর্যোধনের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করেন, তবে দেখবেন তার অনেক কাজেই নৈতিকতার ছিটেফোঁটাও ছিল না। দ্যূতক্রীড়া সভায় দ্রৌপদীকে অপমান করার সময়, ধৃতরাষ্ট্র চুপ ছিলেন। তিনি কৌরবদের অনৈতিক কার্যকলাপ থামানোর কোনো চেষ্টাই করেননি।
এখানে এক ধরণের পিতৃত্বের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়। ধৃতরাষ্ট্র যদি সেই মুহূর্তে দুর্যোধনকে শাসন করতেন, তবে হয়তো এই অপমানের আগুন মহাভারতের যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াত না।
অর্জুন ও দুর্যোধনের তুলনা
আপনি কি জানেন, ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষপাত শুধুমাত্র দুর্যোধনের প্রতি তার ভালোবাসা থেকেই নয়, বরং পাণ্ডবদের প্রতি ঈর্ষা থেকেও সৃষ্টি হয়েছিল? অর্জুন ও দুর্যোধনের মধ্যে স্পষ্ট প্রতিভার পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ধৃতরাষ্ট্র কখনো পাণ্ডবদের প্রতি সুবিচার করেননি। তিনি পাণ্ডবদের হস্তিনাপুর থেকে বের করে পাঠিয়েছিলেন খাণ্ডবপ্রস্থে।
মহাভারতে বলা হয়েছে:
“যে রাজা ন্যায়ের পথে না চলে, তার প্রজারা শান্তিতে থাকতে পারে না।”
ধৃতরাষ্ট্রের ন্যায়ের অভাব রাজ্যের অস্থিরতা এবং শেষমেশ যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিদুরের সতর্কবার্তা উপেক্ষা
আপনার মনে হতে পারে, ধৃতরাষ্ট্র তো বিদুরের পরামর্শ শুনতে পারতেন! বিদুর বারবার তাকে সতর্ক করেছিলেন দুর্যোধনের কার্যকলাপ নিয়ে। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেছিলেন। তার কারণ, তিনি নিজের ভেতরের পক্ষপাত থেকে বের হতে পারেননি।
কৃষ্ণের উপদেশের গুরুত্ব না দেওয়া
মহাভারতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো কৃষ্ণের শান্তি প্রস্তাব। আপনি দেখবেন, কৃষ্ণ যখন হস্তিনাপুরে শান্তি স্থাপনের জন্য আসেন, তখনও ধৃতরাষ্ট্র তার ছেলের পক্ষ নেন।
কৃষ্ণ বলেন:
“ধর্মের পথ ছেড়ে যে ব্যক্তি অধর্মে চলে, তার পতন অবধারিত।”
কৃষ্ণের এই কথা ধৃতরাষ্ট্রের মনে জায়গা করেনি। পক্ষপাতের অন্ধকারে তিনি নিজের পরিবারের ধ্বংস ডেকে আনলেন।
শিক্ষা এবং আমাদের জীবনে প্রভাব
আপনার জীবনেও হয়তো এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যেখানে আপনাকে পক্ষপাতিত্বের মুখোমুখি হতে হবে। ধৃতরাষ্ট্রের গল্প আমাদের শিখিয়ে যায় যে পক্ষপাত শুধু নিজের নয়, পরিপার্শ্বের মানুষেরও ক্ষতি করে।
আপনি যদি পিতামাতা হন, তবে আপনার দায়িত্ব হলো ন্যায়ের পথে চলা। আপনার সন্তানদের মধ্যে সাম্য এবং নৈতিকতার বীজ বপন করা। পক্ষপাতিত্বের ফাঁদে পা দিলে আপনি এবং আপনার পরিবার উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উপসংহার
ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষপাত তার পরিবার এবং রাজ্যের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল। আপনি কীভাবে এই শিক্ষা নিজের জীবনে প্রয়োগ করবেন? আপনি কি ন্যায়ের পথ বেছে নেবেন, নাকি ধৃতরাষ্ট্রের মতো ভুল করবেন?
“ধর্মই জীবনের ভিত্তি। ধর্ম ত্যাগ করলে জীবনও স্থির থাকে না।”
এই মহাভারতের উক্তি নিয়ে ভাবুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন:
আমার সিদ্ধান্ত কি ন্যায়ের পথকে অনুসরণ করছে?