আমরা জীবনে অনেক সময় হিংসা ও প্রতিযোগিতার কারণে সম্পর্ক হারিয়েছি বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছি। তবে, এর গভীরতা এবং প্রভাব বোঝার জন্য মহাভারতের দিকে তাকালে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আপনি যদি মহাভারতের নীতিগুলো জীবনে প্রয়োগ করতে চান, তবে ভাইদের মধ্যে হিংসা ও প্রতিযোগিতা কীভাবে সম্পর্ক নষ্ট করে তা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। আজ আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
মহাভারতের শিক্ষা: দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠির
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠিরের সম্পর্কের মূল সমস্যা কী ছিল? দুর্যোধনের ঈর্ষা এবং তার সম্পত্তি দখলের ইচ্ছা তার ভাইদের সঙ্গে সম্পর্কের সম্পূর্ণ ধ্বংস ঘটিয়েছিল। একবার যখন দুর্যোধন তার পিতার সভায় দ্রৌপদীকে অপমান করল, তখন তা শুধু পান্ডবদের নয়, পুরো কৌরব বংশের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াল। মহাভারতে বলা হয়েছে:
“যে ব্যক্তি অন্যের সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে চায়, সে নিজের বাড়িকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।”
আপনি যদি অন্য কারো সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি আসলে নিজের শান্তি ও সম্পর্ককেও ধ্বংস করছেন। দুর্যোধনের মতো হিংসা আপনাকেও অন্ধ করে দেবে।
কৃপণতা ও প্রতিযোগিতার বিপদ
আমি যখন ভীষ্মের চরিত্র বিশ্লেষণ করি, তখন বুঝি কীভাবে তিনি কৌরব এবং পান্ডবদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্যোধনের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এবং ক্ষমতার প্রতি লোভ তাকে এমন অবস্থায় ফেলেছিল যেখানে ভ্রাতৃত্ব একটি শূন্য ধারণায় পরিণত হয়েছিল। মহাভারতের একটি চমৎকার উক্তি এখানে প্রাসঙ্গিক:
“যে ব্যক্তি নিজের পরিবারের সঙ্গে যুদ্ধ করে, সে শত্রুর সাহায্য ছাড়া নিজের ধ্বংস ডেকে আনে।”
আমাদের জীবনেও যদি ভাইদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকে, তবে তা সম্পর্কের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। হয়তো আপনার ছোট ভাইয়ের সাফল্য আপনার তুলনায় বেশি, কিন্তু আপনি যদি তাকে উৎসাহিত না করে হিংসা করেন, তাহলে সে কখনো আপনার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করবে না। এই পরিস্থিতি কি আপনি চান?
অর্জুন এবং কর্ণ: প্রতিযোগিতার দুই দিক
আমরা মহাভারতে দেখেছি অর্জুন এবং কর্ণের মধ্যে প্রতিযোগিতা। যদিও তারা একে অপরের শত্রু ছিল, তবুও তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ছিল। কিন্তু যখন দুর্যোধনের মতো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তখন এই প্রতিযোগিতাও হিংসায় পরিণত হয়। একবার কর্ণ দুর্যোধনের পক্ষে পান্ডবদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। তখন কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন:
“তোমার প্রতিযোগীকে সম্মান কর, কিন্তু তার হিংসাকে প্রশ্রয় দিও না।”
এই উক্তি আমাদের শেখায়, প্রতিযোগিতা তখনই স্বাস্থ্যকর থাকে যখন তা সম্মানের উপর ভিত্তি করে হয়। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, যদি আমরা প্রতিযোগিতাকে সঠিকভাবে পরিচালনা না করি, তবে তা সম্পর্ককে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে?
বাস্তব জীবনের উদাহরণ
আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার দুই ভাইয়ের মধ্যে সবসময় একটি অদৃশ্য প্রতিযোগিতা ছিল। এক ভাই ছিল পড়াশোনায় ভালো, আরেকজন খেলাধুলায়। যখন এই প্রতিযোগিতাকে আমরা আনন্দের মধ্যে রাখতাম, তখন তা আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করত। কিন্তু এক সময় আমি দেখলাম, তারা পরস্পরের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠছে। সেই সময় আমি তাদের মহাভারতের কাহিনী শুনিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, “তোমাদের এই হিংসা একদিন সম্পর্ক নষ্ট করবে।” ধীরে ধীরে তারা তা বুঝতে পেরেছিল।
সম্পর্ক রক্ষার উপায়
হিংসা এবং প্রতিযোগিতা থেকে সম্পর্ক রক্ষা করতে হলে আপনাকে মহাভারতের শিক্ষা মেনে চলতে হবে। আমি আপনাকে কিছু সহজ কৌশল শিখিয়ে দিতে পারি:
- পরস্পরের সাফল্য উদযাপন করুন: যখন আপনার ভাই বা বোন কোনো সাফল্য অর্জন করে, তাকে আন্তরিকভাবে প্রশংসা করুন।
- সমস্যার সমাধান খুঁজুন: হিংসার পরিবর্তে সমস্যার মূলে পৌঁছান। মহাভারতের শিক্ষা থেকে শিখুন, আলোচনা এবং সহমর্মিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন।
- সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন: প্রতিযোগিতা বা হিংসার চেয়ে সম্পর্ক বড়। এটা বুঝুন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করুন।
- নেতিবাচক প্রভাব এড়িয়ে চলুন: দুর্যোধনের মতো নেতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন লোকদের কাছ থেকে দূরে থাকুন।
শেষ কথা
মহাভারতের শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। ভাইদের মধ্যে হিংসা এবং প্রতিযোগিতা যদি সম্পর্ক নষ্ট করে, তাহলে আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হারাব। আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করব:
“আপনি কি সেই সম্পর্ককে হারাতে চান যা আপনাকে গড়ে তোলে, নাকি মহাভারতের শিক্ষা গ্রহণ করে সেই সম্পর্ককে আরও মজবুত করবেন?”
চিন্তা করুন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করুন।