মহাভারতের ভীষ্ম এমন এক চরিত্র যিনি নৈতিকতা, আত্মত্যাগ এবং কর্তব্যের প্রতীক। আপনি যদি মহাভারতের আদর্শে নিজের জীবন গড়ে তুলতে চান, ভীষ্মের জীবন থেকে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় পাবেন। তিনি হস্তিনাপুর রাজপরিবারের পিতৃস্থানীয় অভিভাবক ছিলেন, তবে তার ভূমিকা কেবলমাত্র অভিভাবকত্বে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ছিলেন ন্যায়, কর্তব্য এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের জীবন্ত উদাহরণ। চলুন, এই মহান ব্যক্তিত্বকে আরেকটু গভীরভাবে জানি।
ভীষ্মের আত্মত্যাগ
আপনার মনে আছে ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা? যখন সত্যবতীর পিতা শন্তনু রাজাকে তার কন্যাকে বিয়ের শর্ত রাখলেন যে তার সন্তানরা রাজা হবে, তখন ভীষ্ম নিজের রাজসিংহাসনের অধিকার ত্যাগ করলেন। শুধু তাই নয়, তিনি আজীবন ব্রহ্মচারী থাকার প্রতিজ্ঞা করলেন।
আপনার এবং আমার কাছে এই আত্মত্যাগ অকল্পনীয় মনে হতে পারে। কিন্তু ভীষ্ম বলেছিলেন,
“ধর্মসংস্থিতির জন্য নিজের সুখ ত্যাগ করাই প্রকৃত ন্যায়।”
এই শিক্ষাটি আমাদের জীবনেও কাজে লাগতে পারে। আমরা যদি আমাদের পারিবারিক বা সামাজিক দায়িত্ব পালনে আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকি, তবে জীবন আরও সুন্দর হবে।
ক্ষমার শিক্ষা: ভীষ্ম বনাম অমর্যাদার প্রতিশোধ
আপনার জীবনে কি কখনো এমন পরিস্থিতি এসেছে, যখন আপনাকে অপমান সহ্য করতে হয়েছে? ভীষ্ম তার জীবনে অনেকবার অপমানিত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, দ্রৌপদীর সভা-অপমানের সময় তিনি কৌরবদের বিরোধিতা করতে পারেননি, কারণ তিনি ধৃতরাষ্ট্র এবং তার পুত্রদের প্রতি কর্তব্যবদ্ধ ছিলেন। তবে তিনি তার চুপ থাকা নিয়ে নিজে অনুশোচনা করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন,
“কর্তব্য পালনে কখনো কখনো নিঃশব্দ থাকা প্রয়োজন হয়, কিন্তু ন্যায়ের জন্য কণ্ঠ তোলা সবার ধর্ম।”
এই শিক্ষাটি আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি কখনো ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য পিছিয়ে গেছেন? ভীষ্মের এই শিক্ষা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
কর্তব্যপালনের ক্ষেত্রে ভীষ্মের দৃঢ়তা
ভীষ্মের জীবনের আরেকটি বড় দিক হল তার কর্তব্যপালনের দৃঢ়তা। মহাভারতের যুদ্ধের সময়, তিনি কৌরবদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। যদিও তিনি জানতেন কৌরবদের পথ ভুল, তবুও তিনি তাদের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।
তিনি বলেছিলেন,
“কর্তব্যের পথে কষ্ট আসবে, কিন্তু তা থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত নয়।”
আপনার নিজের জীবনে এমন পরিস্থিতি এসেছে কি, যখন আপনি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছেন? ভীষ্মের এই উদাহরণ আপনাকে দেখাবে, কীভাবে কঠিন সময়েও কর্তব্যে অবিচল থাকা যায়।
নৈতিকতার শক্তি: ভীষ্মের যুদ্ধ এবং পরাজয়
ভীষ্মের পরাজয় তার দুর্বলতার কারণে নয়, বরং ধর্মের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধার কারণে। শিখণ্ডী যখন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, ভীষ্ম নিজে আক্রমণ থেকে বিরত রইলেন, কারণ তিনি জানতেন শিখণ্ডী একজন রূপান্তরিত নারীর শরীরধারী। তিনি বলেছিলেন,
“ন্যায় এবং ধর্ম ছাড়া জয় অর্থহীন।”
এই কথাটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আপনি যদি নিজের ন্যায়বোধ বজায় রাখেন, তাহলে হারলেও সেই হার সম্মানের হয়।
ভীষ্মের শিক্ষা: জীবনের পথে নীতি ও ন্যায়
আপনার এবং আমার জীবনে ভীষ্মের মতো এমন চরিত্র খুবই দরকার, যিনি আমাদের পথ দেখাবেন। তার জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি কীভাবে আত্মত্যাগ, ক্ষমা, কর্তব্যপালন এবং ন্যায়ের পথে চলা যায়। মহাভারতে বলা হয়েছে,
“ভীষ্ম শুধু একজন ব্যক্তি নন; তিনি নৈতিকতার প্রতীক।”
আমরা যদি তার জীবন থেকে একটুকু শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারি, তবে আমাদের জীবন অনেকাংশে উন্নত হবে।
সমাপ্তি
আপনি কি ভীষ্মের মতো আত্মত্যাগ এবং ন্যায়বোধে আপনার জীবন সাজাতে প্রস্তুত? তার শিক্ষাগুলি কি আপনার জীবনে প্রাসঙ্গিক? মহাভারতের এই মহান চরিত্রের আদর্শ আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পথপ্রদর্শক হতে পারে।