কৃষ্ণ কি সুখের প্রকৃত অর্থ অর্জুনকে বোঝাতে পেরেছিলেন?

তোমার জীবনে কখনো কি এমন সময় এসেছে যখন মনে হয়েছে, “আমার কী চাই তা আমি জানি না?” আমি জানি, এই প্রশ্নটা খুব গভীর। কিন্তু চিন্তা করো, অর্জুনও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে ঠিক এমনই এক অবস্থায় পড়েছিলেন। আর তখনই কৃষ্ণ, তাঁর সারথি, বন্ধুত্বপূর্ণ গুরুর ভূমিকায় এসে তাঁকে সুখের প্রকৃত অর্থ বোঝানোর চেষ্টা করেন।

তাহলে, সুখের প্রকৃত অর্থ কী? কৃষ্ণের মতে, সুখ হলো মানসিক শান্তি, যা আসে আমাদের দায়িত্ব ও ধর্ম পালনের মধ্য দিয়ে। আমি আজ তোমাকে এর কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করব।

অর্জুনের বিভ্রান্তি এবং কৃষ্ণের পরামর্শ

যখন অর্জুন তাঁর আপনজনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তখন তিনি কৃষ্ণকে বলেন:

“ন চ শ্রেয়ঃ অনুপশ্যামি হত্বা স্বজনমাহভে।”
_

তুমি যদি অর্জুনের জায়গায় থাকো, তাহলে কি একইভাবে অনুভব করতে না? তবে কৃষ্ণ তাঁকে বোঝান যে নিজের ধর্ম বা কর্তব্য পালনের মধ্যেই প্রকৃত সুখ। তিনি বলেন:

“স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ।” _

তাহলে, তোমার কর্তব্য কী? তোমার জীবনে যা করার জন্য তুমি জন্মেছো, সেটাই। কিন্তু এটাই তো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তাই না?

সুখের প্রকৃত অর্থ: – নির্লিপ্তি

কৃষ্ণ অর্জুনকে বোঝান যে সুখ কোনো বস্তুগত জিনিসে নেই। তিনি বলেন:

“যোগঃ কর্মসূ कौशलम्।” _

তুমি যদি নিজের কাজকে নিখুঁতভাবে করো এবং ফলাফল নিয়ে চিন্তা না করো, তবে তুমি প্রকৃত সুখ অনুভব করবে। উদাহরণস্বরূপ, আমি একবার একটি প্রজেক্টে ব্যস্ত ছিলাম যেখানে আমি শুধু কাজের আনন্দ উপভোগ করেছি, ফলাফল কী হবে তা ভাবিনি। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম, কৃষ্ণ ঠিকই বলেছেন।

সুখের প্রকৃত অর্থ: আত্মসমর্পণ

কৃষ্ণ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন:

“সর্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।” _

তুমি কি কখনো ভেবেছো, নিজের ইগো ছেড়ে দিলে কেমন হালকা লাগে? আমি যখন একবার কারো প্রতি ক্রোধ ধরে রেখেছিলাম, তখন বুঝতে পেরেছিলাম, ক্ষমা করাটাই সবচেয়ে বড় সুখ।

সুখের প্রকৃত অর্থ: উদাহরণ ৩ – অমরত্বের উপলব্ধি

অর্জুন যখন মৃত্যু নিয়ে ভীত ছিলেন, তখন কৃষ্ণ তাঁকে বলেছিলেন:

“ন জাতু নাসং ন ত্বং ন জনাধিপাঃ।”
_

কৃষ্ণ এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে আত্মা অমর। তুমি যদি বুঝতে পারো যে মৃত্যু শুধুই একটি রূপান্তর, তবে তোমার জীবনের অনেক ভয় কেটে যাবে।

সুখের প্রকৃত অর্থ: প্রকৃত সম্পর্ক

কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন:

“যে মা পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি।” _

তুমি কি কখনো প্রকৃতিতে কৃষ্ণের উপস্থিতি অনুভব করেছো? আমি একবার গঙ্গার ধারে বসে অনুভব করেছিলাম, যেন কৃষ্ণ সেখানে আছেন। প্রকৃতিতে এই মিলনের অনুভূতি সত্যিকারের সুখ।

সুখের সংজ্ঞা

শেষ পর্যন্ত, কৃষ্ণ অর্জুনকে যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তা হলো, সুখ মানে নিজের ভেতরের শান্তি খুঁজে পাওয়া। আমি এখন তোমাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই: তোমার জীবনে সুখের প্রকৃত অর্থ কী?

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন যখন তাঁর বিভ্রান্তি কাটিয়ে নিজের কর্তব্য পালন করতে প্রস্তুত হলেন, তখনই তিনি সুখের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করলেন। তুমি কি সেই পথ খুঁজে পেয়েছো? যদি না পাও, তাহলে কৃষ্ণের বাণী আবার পড়ে দেখো। হয়তো উত্তর সেখানেই লুকিয়ে আছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top